থানকুনি পাতা আমাদের দেশের খুব পরিচিত একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। গ্রামাঞ্চলে থানকুনি পাতার ব্যবহার আদি আমল থেকেই চলে আসছে। এটি যত্ন নিয়ে চাষ করতে হয়, এমন নয়। অনেকটা অনাদরেই বেড়ে ওঠে এই থানকুনি পাতা। কিন্তু এর উপকারিতা বেশ দামি। এখন অবশ্য চাষও হচ্ছে অনেক জায়গায়। তেতো স্বাদের এই পাতা আমাদের শরীরের জন্য অসংখ্য উপকার বয়ে আনে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে এই পাতা খুবই উপকারী। নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে ছোট-বড় নানা রোগ নিরাময় সম্ভব হয়।
IBS এর সমস্যার সেরা প্রাকৃতিক দাওয়াই থানকুনি পাতা।
এছাড়াও অনেক উপকারী দিক রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক সেসকল উপকারিতা সম্পর্কে।
থানকুনির উপাদান
সেন্টেল্লায় এশিয়াটিকোসাইড, ব্রাহ্মোসাইড, অ্যাসিইয়্যাটিক অ্যাসিড এবং ব্রাহ্মিক অ্যাসিড (ম্যাড্যাস্যাসিক অ্যাসিড) সহ পেন্টাসাইক্লিক ট্রাইটারপেনয়েড রয়েছে। অন্যান্য উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে সেন্টিলোজ, সেন্টেলোসাইড এবং ম্যাডেক্যাসোসাইড।
থানকুনির উপকারিতা
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ যদি নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করে, তাহলে মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অংশের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার। সেসকল উপকারগুলো নিচে তুলে ধরা হলঃ
১। চুল পড়ার হার কমায়
নানা সময়ে হওয়া বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে ২-৩ বার থানকুনি পাতা খেলে স্কাল্পের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়। ফলে চুল পড়ার মাত্রা কমতে শুরু করে। চুল পড়ার হার কমাতে অন্যভাবেও থানকুনি পাতা ব্যবহার করা যায়। পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা নিয়ে তা থেঁতো করে নিতে হবে বা থানকুনি গুঁড়া নিতে হবে। তারপর তার সঙ্গে পরিমাণ মতো তুলসি পাতা এবং আমলা মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। এরপর পেস্টটা চুলে লাগিয়ে নিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। ১০ মিনিট পরে ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে চুলটা। প্রসঙ্গত, সপ্তাহে কম করে ২ বার এইভাবে চুলের পরিচর্যা করলেই দেখা যাবে চুল পড়া বন্ধের পাশাপাশি চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠছে।
২। শরীর থেকে টক্সিক উপাদান দূর করে
নানাভাবে সারা দিন ধরে একাধিক ক্ষতিকর টক্সিন আমাদের শরীরে, রক্তে প্রবেশ করে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রস বা থানকুনি গুঁড়ার সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানগুলি বেরিয়ে যায়। ফলে নানা রোগ সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৩। ক্ষতের সারায়
শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত থামাতে ব্যবহার করতে পারেন থানকুনি পাতা। থানকুনি পাতা বেটে আক্রান্ত স্থানে লাগালে ব্যথা কমে যাবে এবং রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ক্ষত স্থান থেকে সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকে না।
৪। হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় রাখে
থানকুনি পাতা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। থানকুনি পাতায় উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে ঠিকমতো হয় সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যার প্রকোপ খুব বেশি একটা সুবিধা করতে পারে না।
৫। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
থানকুনি পাতায় উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইটোকেমিক্যাল ত্বকের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করার পাশাপাশি বলিরেখা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্কিনের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে কম বয়সে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।
৬। পেটের সমস্যা দূর করে
ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পেটের নানা সমস্যায় থানকুনি অনেক উপকারী। এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়ম করে থানকুনি পাতা খেতে হবে। ৭ দিন নিয়ম করে খেলেই আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। আলসারের সমস্যা ছাড়াতে থানকুনি ব্যাপক কার্যকরী। এছাড়া কৃমির প্রকোপ কমাতেও থানকুনি পাতার জুড়ি নেই।
৭। জ্বর, সর্দি-কাশি ভাল করে
ঋতু পরিবর্তনের সময় আমাদের অনেকেরই জ্বর, সর্দি-কাশি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে থানকুনি পাতা খেলে এসকল সিজনাল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি শরীরের দুর্বলতাও কমে।
৮। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পেন্টাসাক্লিক ট্রিটারপেনস নামের একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে ব্রেনসেল ভালভাবে কাজ করতে পারে। স্মৃতিশক্তির উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধির ধারও বাড়ে চোখে পড়ার মতো।
৯। ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে
থানকুনি পাতাতে থাকা নানা উপাদান আমাদের দেহের ব্লাড প্রেশারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজে আসে। তাই যাদের এধরণের সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত।
১০। শরীরে রক্ত প্রবাহ ঠিক থাকে
অনেকের থ্রম্বোসিসের সমস্যা থাকে। এছাড়াও অনেকের দেহেই অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে রক্তপ্রবাহে সমস্যা হয়। থানকুনি পাতার রস খেলে রক্ত শুদ্ধ থাকে। ফলে শরীরের প্রতি কোশে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যায়। ফলে অনেক সমস্যা দূর হয়।
১১। শরীরে জ্বালাপোড়া দূর করে
থানকুনি পাতার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটারি উপাদান। যার ফলে খুব তাড়াতাড়ি জ্বালা, যন্ত্রণা কমে যায়। সেই সঙ্গে অনেক রকম ইনফেকশন থেকেও দূরে রাখে।
১২। মানসিক অবসাদ দূর করে
মানসিক অবসাদে ভুগলে তা দূর করার জন্য খুব ভালো থানকুনি পাতার রস। থানকুনি স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মানসিক চাপ আর অস্থিরতা দুই কমে। এর ফলে অ্যাংজাইটির আশঙ্কাও কমে যায়।
সতর্কতা
পরিমিত মাত্রায় থানকুনি খেলে কোন সমস্যা বা পার্শপ্রতিক্রিয়া দেয়া দেয় না। এক্ষেত্রে যাদের সপ্তাহ দুয়েকের মাঝে কোন প্রকার অপারেশন হবে, তাদের থানকুনি খাওয়া এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। এছাড়া অতিরিক্ত মাত্রায় থানকুনি পাতা খেলে পেটে ব্যথা, মাথা ঘুরানো, এলার্জি, রক্তচাপ কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। যারা হেপাটাইটিস বা অন্য কোনও লিভারের রোগে ভুগছেন, তাদেরও থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত নয়।
পরিশেষে
থানকুনি পাতাকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে জাদুকরী পাতা বলা হয়। এই পাতা ব্যবহারে বা সেবনে নানা উপকারিতাসহ অনেক রোগের উপশম মিলে। কিন্তু বাজারে নিম্ন মানের সংরক্ষণের কারণে সঠিক গুণাগুণ সম্পন্ন থানকুনি পাতা পাওয়া কষ্টসাধ্য।
এক্ষেত্রে ভরসা রাখতে পারুন ন্যাচারালস থানকুনি গুঁড়ায়। সেরা মানের থানকুনি পাতা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যসম্মত এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে ন্যাচারালস থানকুনি গুড়া প্রস্তুত করা হয়। এতে কোন প্রকার কৃত্রিম উপাদান, কেমিক্যাল, প্রিজারভেটিভ ও ধুলাবালির মিশ্রণ নেই। ন্যাচারালস থানকুনি গুড়া শতভাগ প্রাকৃতিক ও নিরাপদ।
ন্যাচারালসের খাঁটি থানকুনি গুড়া কিনুন, আপনার ও আপনার পরিবারের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন।
সুস্বাস্থ্য মানেই ন্যাচারালস।