মধু খুবই উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। কোরআনে ‘সূরা নাহল’ এর আয়াতে মধুকে ওষুধ এবং খাদ্য উভয়ই হিসেবেই আখায়িত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এতে রয়েছে মানুষের নানান রোগের প্রতিকার। যা বৈজ্ঞানিক গবেষণা মোতাবেকও সত্যতা লাভ করছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, পরিমিত মাত্রায় মধু সেবনে দেহের কোন ক্ষতি হয় না। কারণ মধুতে কোন কোলেস্টেরল নেই। তাই সুস্থ ও অসুস্থ সকলেই মধু খেতে পারবেন। শুধু তাই-ই নয়, নিয়মিত মধু সেবনে নানান রোগ থেকে যেমন মুক্তি পাওয়া যায়, তেমন সার্বিক ভাবেও দেহের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। তাই স্বাস্থ্যের সঠিক যত্ন নিতে আমাদের সকলেরই উচিত প্রতিদিন পরিমিত মাত্রায় মধু খাওয়া।
মধুর উপাদান
মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫ থেকে ১২ শতাংশ মন্টোজ। আরও থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ শতাংশ এনকাইম। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে প্রায় ২৮৮ ক্যালরি। কিন্তু মধুতে কোন চর্বি ও প্রোটিন নেই। যা এর একটি ভাল দিক।
মধুর উপকারিতা
নিয়মিত ও পরিমিত মধু সেবন করলে যেসব উপকার পাওয়া যায়। তা হলো-
দেহে শক্তির যোগান দেয়ঃ মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। মধু দেহে তাপ ও শক্তি যোগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।
হজম শক্তি বাড়ায়ঃ মধুতে যে শর্করা থাকে, তা সহজেই হজম হয়। কারণ, এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে, তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় করে। তাই পেটরোগা মানুষের জন্য মধু বিশেষ উপকারী খাদ্য উপাদান।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এটি ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ১ চা–চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা এবং অম্লত্ব দূর হয়।
রক্তশূন্যতা পূরণ করেঃ মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক। কারণ, এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।
ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে সহায়তা করেঃ ফুসফুস ভাল রাখতে মধু অনেক উপকারে আসে। যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাসকষ্ট) রোগীর নাকের কাছে মধু ধরে শ্বাস টেনে নেওয়া হয়, তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবে। এক্ষেত্রে অনেকে মনে করে থাকেন, এক বছরের পুরোনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো।
অনিদ্রা দূর করেঃ যাদের রাতে ঘুম হয় না, তাদের ঘুমের সমস্যা দুরীকরণে মধু বেশ ভাল ভূমিকা রাখে। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা–চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে।
যৌন শক্তি বাড়ায়: পুরুষদের মধ্যে যাদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে, তারা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান, তাহলে বেশ উপকার পাবেন।
প্রশান্তিদায়ক পানীয়: হালকা গরম দুধের সঙ্গে মিশ্রিত মধু একটি প্রশান্তিদায়ক পানীয়।
দাঁত ও দাঁতের মাড়ি সুরক্ষিত রাখেঃ মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। মধু দাঁতের ওপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ হয়। দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে। মধু রক্তনালিকে সম্প্রসারিত করে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্যও রক্ষা করে। যদি মুখের ঘায়ের জন্য গর্ত হয়, এটি সেই গর্ত ভরাট করতে সাহায্য করে এবং সেখানে পুঁজ জমতে দেয় না। মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়।
পাকস্থলী সুস্থ রাখে: মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক অ্যাসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুকজ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়।
শীতে শরীর গরম রাখেঃ শীতের ঠান্ডায় মধু দেহে তাপ উৎপাদন করে শরীরকে গরম রাখে। এক অথবা দুই চা–চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে।
পানিশূন্যতা পূরণ করেঃ ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ মধু চোখের জন্য অত্যন্ত ভালো। গাজরের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
রূপচর্চায় সহায়তা করেঃ মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মাস্ক হিসেবে মধুর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহৃত হয়।
ওজন কমায়: মধুতে কোনো কোলেস্টেরল বা চর্বি নেই। নিয়মিত মধু সেবনে পেট পরিষ্কার হয়, চর্বি কমে। ফলে দেহের ওজনও কমে।
তারুণ্য বজায় রাখে: তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। এতে রয়েছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। মধু শরীরের সামগ্রিক শক্তি ও তারুণ্য বাড়ায়।
রক্ত পরিষ্কার করেঃ এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মেশান। পেট খালি করার আগে প্রতিদিন এই মিশ্রণ খান। এটি রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি রক্তনালিগুলোও পরিষ্কার করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ মধু শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। দুই চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ রসুনের রস মেশান। সকাল-সন্ধ্যা দুইবার এই মিশ্রণ খান। প্রতিনিয়ত এটার ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ কমায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন সকালে খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে এই মিশ্রণ খাওয়া উচিত।
রক্ত উৎপাদনে সহায়তা: মধুতে আছে রক্ত উৎপাদনকারী উপকরণ আয়রন। আয়রন রক্তের উপাদানকে (আরবিসি, ডব্লিউবিসি, প্লাটিলেট) অধিক কার্যকর ও শক্তিশালী করে।
আমাশয় দূর করেঃ মধু আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়সহ নানাবিধ জটিল রোগের উপকার করে থাকে।
হাঁপানি রোধ করেঃ আধা গ্রাম গুঁড়ো করা গোলমরিচের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু এবং আদা মেশান। দিনে অন্তত তিনবার এই মিশ্রণ খান। এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করবে।
হৃদ্রোগ প্রতিকারে সহায়তা করে: এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদ্রোগের টনিক হিসেবে কাজ করে। এটা হৃৎপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়। এটি শরীরের ভেতরে এবং বাইরে যেকোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতা জোগান দেয়। মধুতে আছে একধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে। এছাড়া আলচার ও গ্যাস্ট্রিক রোগের জন্যও মধু অনেক উপকারী।
খাঁটি মধু চেনার সহজ উপায়
১। শীতের দিনে বা ঠাণ্ডায় খাঁটি মধু দানা বেঁধে যায়।
২। মধুর স্বাদ হবে মিষ্টি, এতে কোনও ঝাঁঝালো ভাব থাকবে না।
৩। খাঁটি মধুর গন্ধ হবে মিষ্টি ও আকর্ষণীয়।
৪। এক টুকরো সাদা কাপড়ে মধু মাখান। আধ ঘণ্টা রাখুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি দাগ থেকে যায়, বুঝবেন মধুটি খাঁটি নয়।
৫। গ্লাসে বা বাটিতে খানিকটা পানি নিন। তার মধ্যে এক চামচ মধু দিন। যদি মধু পানির সঙ্গে সহজেই মিশে যায়, তাহলে বুঝবেন যে এটা অবশ্যই নকল। আসল মধুর ঘনত্ব পানির চাইতে অনেক বেশি, তাই তা সহজে মিশবে না। এমনকি নাড়া না দিলেও মধু পানিতে মিশবে না।
পরিশেষে
আখিরাতে জান্নাতে পাওয়া যাবে এমন কয়েকটি খাবারের মধ্যে মধু হল একটি। যা এর স্বাদ আমরা ইহকালে থেকেই নিতে পারছি। মধুর ব্যাপক উপকারীতা নিয়ে কোরআনে ও হাদিসে আরও বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে। নানান জায়গায় উপদেশ দেয়া হয়েছে মধু সেবনে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)- এর মতে সকল পানীয় উপাদানের মধ্যে মধু সর্বোৎকৃষ্ঠ। তিনি বলেন, “মধু এবং কোরআনের মাধ্যমে তোমাদের চিকিৎসা নেয়া উচিত”।
তবে মধু থেকে সঠিক উপকার পেতে খাঁটি মধু খাওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ন্যাচারালসের সরিষা ফুলের মধুতে আস্থা রাখতে পারেন। কারণ এতে কোন প্রকার ক্যামিকেল মিশ্রণ নেই। অত্যাধুনিক মশিনের মাধ্যমে প্রসেসিং করে, সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত অবস্থায় ও অক্ষুণ্ণ স্বাদে ন্যাচারালস মধু সংগ্রহ করে থাকবে। ফলে এতে পাবেন মধুর আসল গুণাগুণ ও উপকার। তাই আপনার স্বাস্থ্যের সঠিক যত্ন নিতে বেছে নিন ন্যাচারালসকে।
খাঁটি মধুর নিশ্চয়তায়, ভরসা রাখুন ন্যাচারালসের সেবায়।
সর্দি ও কাশির সময়, গরম মসমে অথবা শারীরিক ক্ষমতা বা স্বাস্থ্য উন্নত করতে, মধু একটি অমূল্য সাহায্যকারী উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে।
মধু খুবই উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। কোরআনে ‘সূরা নাহল’ এর আয়াতে মধুকে ওষুধ এবং খাদ্য উভয়ই হিসেবেই আখায়িত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এতে রয়েছে মানুষের নানান রোগের প্রতিকার। যা বৈজ্ঞানিক গবেষণা মোতাবেকও সত্যতা লাভ করছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, পরিমিত মাত্রায় মধু সেবনে দেহের কোন ক্ষতি হয় না। কারণ মধুতে কোন কোলেস্টেরল নেই। তাই সুস্থ ও অসুস্থ সকলেই মধু খেতে পারবেন। শুধু তাই-ই নয়, নিয়মিত মধু সেবনে নানান রোগ থেকে যেমন মুক্তি পাওয়া যায়, তেমন সার্বিক ভাবেও দেহের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। তাই স্বাস্থ্যের সঠিক যত্ন নিতে আমাদের সকলেরই উচিত প্রতিদিন পরিমিত মাত্রায় মধু খাওয়া।