কাজু বাদামের অপর নাম ন্যাচারাল ভিটামিন ট্যাবলেট
Cashew Nut বা কাজু বাদাম অত্যন্ত সুস্বাদু ও উপকারী একটি খাবার। আমরা অনেকেই সকাল-সন্ধ্যা এই কাজু বাদাম খেয়ে থাকি। তবে এর উপকারিতা বা অপকারিতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা রাখি না। যে কোন জিনিসই অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া হলে আমাদের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবেই। তাই আমরা যদি কাজু বাদাম নিয়ে স্পষ্ট ধারনা রাখি, তবে আমরা জেনে-বুঝে পরিমিত মাত্রায় কাজু বাদাম খেয়ে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারব।
কাজু বাদাম প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম এই বাদামটি নিয়মিত খেলে শরীরে নানা উপকার পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, কাজু বাদামে ভিটামিনের মাত্রা এতো বেশি থাকে যে চিকিৎসকেরা একে প্রাকৃতিক বা ন্যাচারাল ভিটামিন ট্যাবলেটও বলে থাকেন। তাই খাদ্য ও পুষ্টিগুণ বিবেচনায় খাবারের তালিকায় কাজু বাদাম রাখা উচিত।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত যদি এক মুঠো করে কাজু বাদাম খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর হয়। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার।
আসুন একনজরে দেখে নিই কাজু বাদামের উপকারিতা গুলোঃ
১. অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমায়
কাজু বাদামে প্রচুর মাত্রায় আয়রন রয়েছে। যা শরীরে প্রবেশ করে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তসল্পতার মতো সমস্যা দ্রুত দূরীভূত হয়। পাশাপাশি কাজু বাদাম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষ অবদান রাখে। তাই সুস্থ জীবন-যাপনে রোজ কাজু বাদাম খাওয়া উচিত।
২. শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
কাজুতে ওলিসিক নামে এক ধরনের মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা আমাদের দেহে বাজে কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। নিয়মিত এই বাদমটি খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে
কাজু বাদামে অন্যান্য উপাদানের সাথে আরও রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গবেষণা থেকে পাওয়া, যেখানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, সেখানে ক্যান্সার সেলের খোঁজ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে কাজু বাদামে থাকা প্রচুর মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রসঙ্গত, কাজু বাদামে থাকা প্রম্যান্থোসায়ানিডিন নামে একটি উপাদান শরীরে টিউমার এর উৎপত্তি প্রতিরোধ করে।
৪. হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে এই বাদামটি নিয়মিত খেলে হাড়ের শক্তি বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে বুড়ো বয়সে গিয়ে অস্টিওআর্থারাইটিসের মতো হাড়ের রোগ হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এক মুঠো করে কাজু বাদাম খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যা ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৬. সংক্রমণের আশঙ্কা কমায়
কাজু বাদামে থাকা জিঙ্ক শরীরকে ভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে এই উপাদানটি।
৭. হার্ট ভাল রাখে
কাজু বাদামে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ক্যান্সার প্রতিরোধের পাশাপাশি নানাবিধ হার্টের রোগ থেকে বাঁচাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে বা বংশগত কারনে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরিমিত মাত্রায় কাজু বাদাম খেতে পারেন। এতে আপনার হার্ট ভাল থাকবে ও হার্টের সক্রিয়তা বাড়বে।
৮. চুলের সৌন্দর্য বাড়ায়
কাজুতে প্রচুর পরিমানে কপার জাতীয় খনিজ উপাদান রয়েছে। যা চুলের উজ্জ্বল্তা বাড়ানোর পাশাপাশি চুলের গোড়াকে মজবুত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই-ই নয়, কাজু বাদামে থাকা কপার শরীরের অন্দরে এমন কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যা চুলের কালো রংকে ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৯. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে
যাদের ব্লাড প্রেসার প্রতিনিয়ত ওঠা-নামা করে, তাদের জন্য কাজু বাদাম অত্যন্ত উপকারী। কারণ এই বাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, যা ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১০. নার্ভের ক্ষমতা বাড়ায়
কাজুতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নার্ভের ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করে। যার ফলে সার্বিকভাবে মস্তিষ্কেরও শক্তি বাড়ে। আর একবার ব্রেন পাওয়ার বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে ব্রেনের কগনিটিভ ফাংশনেরও উন্নতি ঘটে। ফলে বুদ্ধি, স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ ক্রমশ বাড়তে থাকে।
এছাড়াও কাজু বাদাম দেহের নানান পুষ্টি ঘাটতি পূরণের উপকার আসে।
কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম
কাজু বাদামকে পুষ্টির ভান্ডারও বলা চলে। অনেকে বাদাম খাওয়া শুরু করলে থামতেই পারে না। আবার কেউ কেউ ওজন বাড়ার ভয়ে কাজু বাদাম এড়িয়ে চলে। কিন্তু এরূপ স্নেহ জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। তবে তা অবশ্যই নিয়ম মেনে খেতে হবে।
৩০ গ্রাম কাজু বাদামে ১২০ থেকে ১৪০ ক্যালরি পর্যন্ত থাকে। ফলে আপনি প্রতিদিন ১২-১৫টি কাজু বাদাম খেতে পারেন।ভাজা কাজু খেতে চাইলে বাসায় ঘি অথবা বাটার দিয়ে ভেজে খেতে পারেন।আর কুড়মুড়ে স্বাদের স্বাস্থ্যকর রোস্টেড রেডি কাজুর জন্য বেস্ট হচ্ছে ন্যাচারালস রোস্টেড কাজু।
কাজু বাদাম আরো বিভিন উপায়ে খাওয়া যায়।সর্বোচ্চ উপকার পেতে আপনাকে এর খোসা ছাড়িয়ে প্রায় ৩-৬ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এর মধ্যে পরিমিত মাত্রায় লবণ দিয়ে রেখে দিন। এরপর সময় শেষে বাদামগুলো পানি থেকে ওঠিয়ে নিয়ে রোদের তাপে বা ফ্রাই প্যানে নিয়ে হালকা আগুনের আঁচে ভাজতে হবে। এমনভাবে ভাজতে হবে যাতে এর ভিতরের পানি পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। ফলে বাদামের ভিতর থাকা ফাইটিক অ্যাসিড ভেঙ্গে যাবে ও হজম প্রক্রিয়ায় কোনোরূপ ব্যাঘাত ঘটবে না। আর এরকম ভাবে বাদাম শুকিয়ে নিলে দীর্ঘদিন বায়ুরোধক কৌটায় তা সংরক্ষণ করতে পারবেন।
অথবা এসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে না চাইলে, আপনি নিতে পারেন ন্যাচারালসের রোস্টেড কাজু। যা স্বাদে ও সুস্বাস্থ্যে অনন্য। ন্যাচারালস প্রিমিয়াম গ্রেডের কাজু বাদাম বাছাই করে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে রোস্টেড করে প্যাকেটজাত করে। ফলে প্রতিটি কাজু বাদামই হয় কুড়মুড়ে ও পরিপূর্ণ পুষ্টিমানে ভরপুর। যা আপনাকে বাজারের অতিরিক্ত মাত্রায় তেল ও লবণযুক্ত কাজু থেকে অধিক উপকার দিবে।
পরিশেষে, নিয়মিত ও পরিমিত মাত্রায় কাজু বাদাম তথা ন্যাচারাল ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ার কোনো জুড়ি নেই। কারন কাজু বাদাম খাওয়ার অভ্যাস আপনার ও আপনার পরিবারের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে।